Course Content
মডিউল-১
মডিউল-১, সেশন-২ঃ ফার্মাসিস্ট কোড অব ইথিকস এবং মডেল মেডিসিন শপে গ্রেড ‘সি’ ফার্মাসিস্টদের (ফার্মেসি টেকনিশিয়ান) দায়িত্ব ও কর্তব্য
0/2
মডিউল-২
0/27
মডিউল-৪
0/21
মডিউল-৪, সেশন-৩ঃ ওষুধ প্রয়োগের পথ
0/8
মডিউল-৫
মডিউল-৫, সেশন-২ঃ শুধুমাত্র প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমেই ক্রেতার নিকট বিক্রয়যোগ্য ওষুধসমূহ (Prescription Only Medicines)
0/13
মডিউল-৭
মডিউল-৭, সেশন-২ঃ এ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকর হওয়া যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে
0/7
মডিউল-৮ঃ গুড ডিসপেন্সিং প্র্যাকটিস নিশ্চিতিকরণের মাধ্যমে করোনা মহামারি কালীন সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ফার্মাসিষ্ট/ ডিপ্লোমা-ফার্মাসিষ্ট/ ফার্মেসি টেকনিশিয়ানদের ভূমিকা
মডিউল-৮, সেশন-২ঃ করোনা সংক্রমণকালীন নিরাপদ ওষুধ ডিসপেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুসরণ
0/12
Private: Training Manual for Grade C Pharmacy Technicians
About Lesson

ওষুধের ইতিহাস

প্রাচীনকালে মানুষ রোগমুক্তির জন্য যেসব ওষুধ ব্যবহার করতো তার অধিকাংশই ছিল ভেষজ। ভেষজ ওষুধের ইতিহাস মানব সভ্যতার মতই পুরোনো। বিভিন্ন প্রাচীন নথি-পত্রে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, খ্রিস্টজন্মের বহু আগে থেকেই চীন, ভারত, মিশর, গ্রীস ইত্যাদি সভ্যতায় গাছ-গাছড়া, লতাপাতা থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হতো। ‘এবারস্ প্যাপিরাস’ (Ebers’ Papyrus) হল এমনই এক প্রমাণ যা খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ১৬০০ বছর আগে লিখিত। এটি একটি ৬০ ফুট লম্বা এবং ১ ফুট চওড়া কাগজের স্ক্রল যা অনায়াসে গুটিয়ে রাখা যায়। এতে আছে বিভিন্ন ধরনের ৭০০টি ওষুধের বর্ণনা এবং ৮০০টিরও বেশি ফর্মুলা যা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। এ সব ওষুধের মধ্যে রয়েছে এমন সব বিভিন্ন ওষুধের বর্ণনা যার অনেকগুলোই এমনকি বর্তমান শতাব্দীতেও ব্যবহার করা হয়।

ইমহোটেপ

ঐতিহাসিকরা ইমহোটেপ নামে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৭২৫ সালে (অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৪৭৪৪ বছর আগে) জন্মগ্রহণকারী মিশরের একজন বিখ্যাত চিকিৎসকের সন্ধান পেয়েছেন যিনি মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য মমি তৈরির কৌশল আবিস্কার করেন। পিরামিডের ভেতরে যে মমি পাওয়া যায় তা তিনি তৈরি করেছিলেন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। অসামান্য প্রতিভার ইমহোটেপ ছিলেন একজন মিশরীয় সম্রাট বা ফারাও। কিন্তু তিনি অতি সাধারণ পোশাক পরতেন এবং সাদাসিদা জীবনযাপন করতেন। তিনি ইতিহাসে একাধারে প্রথম স্থপতি, প্রথম প্রকৌশলী এবং প্রথম চিকিৎসক হিসেবে বিবেচিত। অনেক প্রাচীন কালের হওয়াতে তাঁর কর্মকান্ডের ব্যাপক বিবরণ পাওয়া যায় না। এবারস্ প্যাপিরাস অনুযায়ী তিনি অনেক গাছগাছড়া ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করেছেন যার মধ্যে এসফাটিডা, খেজুর, রসুন, ক্যাস্টর অয়েল ইত্যাদি রয়েছে। তিনি যুদ্ধে আহত সৈন্যদের হাড় জোড়া লাগানোর জন্য বিশেষ ব্যান্ডেজ ও লতাগুল্ম ব্যবহার করতেন। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ইমহোটেপ কিভাবে এত জটিল চিকিৎসা করতেন তা ভাবতে বিস্ময় জাগে।

ইমহোটেপ

শেন নাং

চীনারা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫,০০০ বছর আগে থেকে ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করত। খ্রিস্টপূর্ব ২,০০০ সালে চীনের সম্রাট শেন নাং রচনা করেন ‘পেন্টি-সাও’ (Pen-ti-Sao) নামের এক ভেষজ গ্রন্থ। এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরনো চৈনিক ওষুধ বিষয়ক বই। তিনি চীনের সম্রাট হলেও সাধারণ মানুষের মত জীবনযাপন করতেন। এমনকি নতুন ওষুধ নিজের শরীরেও প্রয়োগ করতেন। তার গাছপালার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। সেই সময় একবার চীনে শিকারের অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে শেন নাং তাঁর জনগণকে চাষাবাদে উৎসাহিত করেন। এসময় তিনি তাদেরকে হাতে-কলমে শিক্ষা দান করেন। তাঁর এই অবদানের জন্য তাকে চীনের কৃষির জনক বলা হয়। কথিত আছে যে, শেন নাং প্রথম চা আবিষ্কার করেন। তিনি চা প্রস্তুত প্রণালী এবং এর ওষুধি গুণ সর্ম্পকে জনগণকে অবহিত করেন। তিনি চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত উদ্ভিদের শ্রেণি বিন্যাস ও মানদন্ড তৈরি করেন। এভাবে তিনি ৩৬৫টি উদ্ভিদ, প্রাণী এবং খনিজ ওষুধের তালিকা তৈরি করেন। শেন নাং যেসব ওষুধের কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে আজকের দিনেও ব্যবহৃত হয় এমন ওষুধ যেমন রুবার্ব, পডোফাইলাম, জিনসেং, ইফিড্রা ইত্যাদি রয়েছে। তাঁর এই কাজকে চৈনিক ফার্মাকোপিয়ার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।

শেন নাং

চরক

ভারতীয় সভ্যতার চিকিৎসকেরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ভেষজ লতা-পাতাকে তাদের ওষুধি গুণ অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৮০০ সালে চরক তাঁর লিখিত ‘চরক সংহিতা’ বইতে এরকম ৫০টি শ্রেণি তৈরি করেন যার প্রতিটিতে ছিল ১০টি করে ওষুধ। তাঁর মতে এই ৫০ ধরনের ওষুধ ছিল একজন চিকিৎসকের মূল হাতিয়ার। চরক ছিলেন কাশীর মহারাজার রাজবৈদ্য। তিনি তাঁর ওষুধগুলোকে ‘আসব’, ‘অরিস্ট’, ‘বটিকা’, চূর্ণ’, ‘তৈল’ ইত্যাদি উপস্থাপনায় বা ডোজেস্ ফর্মে তৈরি করতেন। তাঁর চিন্তাধারা ও চিকিৎসা পদ্ধতির হাত ধরেই আজকের আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠা। তাঁর ‘চরক সংহিতা’ বইটিই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের প্রথম বই। তিনি শারীরবিদ্যা, রোগতত্ত্ব এবং ভ্রূণ বিদ্যার সুপন্ডিত ছিলেন। তিনি ওষুধের উৎসগুলোকে উদ্ভিজ, প্রাণীজ ও খনিজ — এই তিনভাগে বিভক্ত করেন। তাঁর বই থেকে আমরা আজ থেকে প্রায় ২,৮০০ বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে কী ধরনের অসুখ হতো, সেগুলোর চিকিৎসায় কী ওষুধ ব্যবহার হতো, কীভাবে সেগুলো তৈরি হতো, কোন্ মাত্রায় ব্যবহার হতো, এমনকি রোগীর পথ্য কী হবে এসব বিষয়ে জানতে পারি। ইউরোপের বিজ্ঞানীরা তাঁকে ‘ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক’ বলে অভিহিত করেন।

চরক

শুশ্রুত

একইভাবে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৬০০ সালে শুশ্রুত তাঁর ‘শুশ্রুত সংহিতা’ বইতে ৭৬০ ধরনের ওষুধকে তাদের সাধারণ গুণ অনুযায়ী ৭টি গোষ্ঠীতে ভাগ করেন। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় চিকিৎসার পাশাপাশি তিনিই প্রথম অস্ত্রোপচার প্রবর্তন করেন। ভারতীয় সভ্যতায় তিনি অস্ত্রোপচার বা শল্যবিদ্যায় অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনি অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ১২০টি বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নকশা লিপিবদ্ধ করেন যা আজও অনুসরণ করা হয়। তিনি ছিলেন বেনারসের অধিবাসী, গঙ্গা নদীর তীরে ছিল তাঁর হাসপাতাল। চরক এবং শুশ্রুত যে কাজ করে গেছেন সেগুলোই আজকের আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রের ভিত। ভারতীয় জনগণের একটি বড় অংশ এখনও আর্য়ুবেদীয় শাস্ত্রমতে চিকিৎসা গ্রহণ করে।

শুশ্রুত

Join the conversation
Scroll to Top